উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬/০৩/২০২৪ ৯:৪৯ এএম , আপডেট: ২৬/০৩/২০২৪ ৯:৫৫ এএম

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কায় বিস্ফোরণের পর আগুন লাগলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ওই গাড়িতে থাকা তিন যাত্রী বের হতে পারলেও ভেতরেই পুড়ে মারা যান চালক আবদুস সবুর।

সোমবার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার গাছবাড়িয়া কলঘর এলাকায় এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রাস্তাটি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।

Close PlayerUnibots.com
নিহত সবুরের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম ঢেমশার ইছামতী আলীনগর এলাকায়। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন শিশুসন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা। তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, যাত্রী নিয়ে পটিয়া থেকে সাতকানিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন আবদুস সবুর। চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া বরগুনি ব্রিজ পার হয়ে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তারা আটক করলে টাকা দিতে হবে– এই ভয়ে দ্রুত তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে নেওয়ার সময় পেছন থেকে বালুবাহী একটি ডাম্প ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে পেছনে থাকা সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। অটোরিকশায় আগুন ধরে যেতে দেখে পুলিশের গাড়িটি পালিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন জড়ো হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করা হয়। পুলিশের একটি গাড়ি অতিক্রম করার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীরা তা ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। পরে চন্দনাইশ থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অটোরিকশা আটক করে চালকদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা হাতিয়ে নেয় জেলা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। তাদের টাকা দিলে ঠিকই মহাসড়কে তিন চাকার যান চালানো যায়।

ঘটনাস্থলে সাইফুল নামে এক ব্যক্তি বলেন, সড়কে দাঁড়িয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন গাড়ি ধরছিল পুলিশ। দূর থেকে তা দেখে অটোরিকশাটি ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দুর্ঘটনার শিকার হন আবদুস সবুর। আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ লোকজন জড়ো হতে দেখে পুলিশ পালিয়ে যায়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন বলেন, ‘সার্জেন্ট গোলাম হোসেন সবুজ মাঝেমধ্যেই দু’জন ট্রাফিক পুলিশ নিয়ে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলযোগে সেখানে যান। অটোরিকশা ধরে ধরে চন্দনাইশ থানায় পাঠিয়ে দেন। একেকটা অটোরিকশা থেকে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন তিনি। টাকা না দিলে মামলা দিয়ে দেন।’
হাইওয়ে পুলিশের দোহাজারী থানার ওসি খান মোহাম্মদ এরফান বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশের কোনো টিম ঘটনাস্থলে ছিল না। একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।’ তবে চট্টগ্রাম জেলা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট গোলাম হোসেন সবুজের নেতৃত্বে দুপুর দেড়টা থেকে গাছবাড়িয়ার বরগুনি ব্রিজ এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা।

অভিযোগের বিষয়ে সার্জেন্ট সবুজ বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। রমজানে সড়কে আমাদের চেকপোস্ট বসানো বন্ধ। লোকজন কেন অভিযোগ করছে জানি না। মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। তাই কোনো গাড়ি আটক করলে মামলা দিয়ে চন্দনাইশ থানায় পাঠিয়ে দিই। আজ (গতকাল) কোনো গাড়ি আটক করিনি।’

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এ এন এম ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, ‘এখন চেকপোস্ট বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। আর জেলা ট্রাফিক পুলিশের বক্স আছে দোহাজারীতে। ঘটনাস্থল আরও এক কিলোমিটার দূরে। সবুজের নেতৃত্বে চেকপোস্ট বসানোর অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের প্রমাণ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অবুঝ ২ শিশু সন্তান জানে না তাদের পিতা আর বেঁচে নেই

চন্দনাইশে সিএনজি টেক্সিসহ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া আবদুস সবুরের অবুঝ ২ শিশু এখনো জানে না পৃথিবীর বুকে তাদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল পিতা আর বেঁচে নেই। তাদের ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। গতকাল সকালে সিএনজি টেক্সি নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সন্তানদের শেষ আদর করে বেরিয়েছেন। বিকেলে সিএনজিতে পুড়ে অঙ্গার হওয়ার খবর শুনে নিহত সবুরের স্ত্রী রুমি আকতার (২৪), মা গোল চম্পা (৫৫) ও আত্মীয় স্বজনরা যখন ঘটনাস্থল কলঘর এলাকায় আসে তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। এ সময় তার ৫ বছরের অবুঝ শিশু পুত্র সাইদুল ইসলাম ও দেড় বছরের শিশু কন্যা মেহেরুল জান্নাত ফেল ফেল চোখে এদিকে ওদিক তাকাচ্ছিল। এ সময় স্ত্রী ও মায়ের আহাজারী ও ছোট দুই শিশুর মলিন চেহেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত সকলকেই অশ্রুসজল করে দেয়। আবদুস সবুরের স্ত্রী রুমি আকতার বিলাপ করে বলেন, তার স্বামী সকাল ১১টায় গাড়ি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। এ বের হওয়া যে প্রিয় স্বামীর শেষ বের হওয়া হবে হয়তো তার জানা ছিল না। এখন তার অবুঝ দুই শিশু সন্তানের কি হবে এই বলেই বিলাপ করছেন তিনি।

গতকাল সোমবার বিকেল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের গাছবাড়িয়া কলঘরস্থ বরগুনি ব্রিজ এলাকায় সিএনজিসহ জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান আবদুস সবুর।

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...

ইসলামপুরে আটক রোহিঙ্গা যুবককে কুতুপালং ক্যাম্পে হস্তান্তর

জামালপুরের ইসলামপুরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার মো. রোবেল (২২) নামের সেই রোহিঙ্গা যুবককে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের ট্রানজিট ...